মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, গোয়ালন্দ প্রতিনিধি: ‘নিরাপদে ইশকুলে ফিরি’- এই স্লোগানে গ্রামে গ্রামে কমিটি গঠন। করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘ ১৮ মাসেরও বেশি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও আবার তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নিয়মিত স্কুলে ফিরতে পারছেনা সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। স্কুল খুললেও রুটিন মেনে পরিচালিত হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
দীর্ঘদিন করোনা পরিস্থিতি খারাপ থাকায় কোমলমতি শিশুদের করোনার ভয়াবহ থেকে সুরক্ষা পেতে গত বছরের মার্চ মাস থেকে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে সাময়িকভাবে স্কুল খোলা হলেও আবার বন্ধ হয়। এই দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় ঝড়ে পরেছে অনেক কোমলমতি শিশুরা, অনিয়মিত হয়ে পরেছে অনেক শিক্ষার্থী। এই ঝড়ে পরা এবং আনিয়মিত শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে পড়ানোর অনন্য এক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা(কেকেএস)।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় অবস্থিত যৌনপল্লীর অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও নারীদের নিয়ে কাজ করা কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থার বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ‘রিকভার ইডুকেশন লস এ্যাটেন্ডেন্স কন্টিউনিটি ফর স্কুলিং’ (রিলাকস) নামের প্রকল্পের মাধ্যমে করোনাকালীন সময়ে গোয়ালন্দ উপজেলায় অবস্থিত ১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাচমেন্ট এরিয়ার স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝড়েপরা ও অনিয়মিত শিশুদের স্কুলমুখী করতে গোয়ালন্দ উপজেলার মোট ৫০ টি গ্রামে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করতে দেখা যায়।
জানা যায় প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করার লক্ষে ১ জন করে প্রকল্প কর্মকর্তা, সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা, মিল অফিসার,প্যারামেডিক এবং ১২ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে কর্মকান্ড সফল করার চেষ্টা করে চলেছে সংস্থাটি। প্রকল্পটি শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করছেন।
রিলাকস প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা আ.ম. ম. কিবরিয়া বলেন, দেশে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা পিছিয়ে পরায় আমরা আপাতত দৌলতদিয়া পূর্বপাড়ার যৌনপল্লীর সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ গোয়ালন্দ উপজেলার ১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭০১৮ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি।
কমিটি গঠন শেষে কোন স্কুলে কতজন শিক্ষার্থী ঝড়ে পরেছে? এবং কারা অনিয়মিত স্কুলে আসে সে তালিকা প্রস্তুত করে তাদের বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছি। প্রতিদিন শিক্ষকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পাঠদান করাচ্ছেন।
১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫ টি সরকারি স্কুলসহ ১৩ টি বে-সরকারি স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে ৫ টি হাই স্কুল, ১ টি মাদ্রাসা, ৭ টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল রয়েছে।
এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়মিত ও ঝড়েপরা ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে ফেরাতে কাজ করছে রিলাকস প্রকল্প। কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় ঝড়েপরা ও অনিয়মিত শিশুদের কাউন্সিলিং করে স্কুলমুখী করা কমিটির সদস্যদের প্রধান কাজ। প্রতিটি গ্রামে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রিলাকস প্রকল্পের শিক্ষক আব্দুল খালেক রাজবাড়ী ডটকমকে বলেন, প্রকল্পটি সেভ দ্য চিলড্রেনের নিজিস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ অসহায় ও গরীব। নদীভাঙ্গনের ফলে সহায় সম্বলহীন জীবন-যাপন করতে হয় তাদের।
এদের সন্তানরা পড়ালেখায় অনেক পিছিয়ে। তার উপর এখানে রয়েছ দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লীর সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা। এদের মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করতে কেকেএস সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ঝড়েপরা ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্কুলমুখী করায় প্রকল্পটির প্রধান কাজ।