37.8 C
Rajbari
বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
Homeজাতীয়চট্টগ্রাম বিভাগউপজেলা প্রশাসনের ১০০ গজ দুরত্বে ‘বিপজ্জনক হাট

উপজেলা প্রশাসনের ১০০ গজ দুরত্বে ‘বিপজ্জনক হাট

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী এলাকায় ‘শিকলবাহা ক্রসিং বাজার’টি প্রতি সপ্তাহে বসলেও প্রশাসনের কোন বিভাগের টনক নড়ছে না। নীরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং হাইওয়ে পুলিশ। অথচ প্রকাশ্যে বাজারটি বসছে পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সামনে। আবার বাজারটির ১০০ গজ দুরত্বে উপজেলা প্রশাসনের অবস্থান। তবুও কারো দৃষ্টি নেই বাজারটি সরানোর।

ফলে, মহাসড়কের জায়গায় যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কের উপর সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। পথচারী থেকে শুরু করে যাত্রীরাও সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এছাড়া যত্রতত্র মানুষের রাস্তা পারাপারের কারণে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। কিছুদিন আগেও ওই জায়গায় সৌদিয়া বাস ও পিকআপের সংঘর্ষে জামাল উদ্দীন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন মোটর সাইকেল আরোহী এস এম খোরশেদুল আলম (৪২)। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন- সাইফুল, ইশান, তুষার, ঝুমুর, মাইনুল ও বাদশা মিয়া।

জানা যায়, পুরনো মহাসড়ক আইন সংশোধন করে গত ডিসেম্বরে জারি করা মহাসড়ক আইন অনুযায়ী, মহাসড়কের ভূমির প্রান্তসীমা থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত সংরক্ষিত অংশ। আগে থেকে অনুমতি না নিয়ে এই অংশে হাট-বাজার বসানো, অবকাঠামো তৈরি কিংবা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ওই অংশটি ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এ আইন মানছে না সংশ্লিষ্ট কোন বিভাগ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের উপর শিকলবাহা ক্রসিং বাজারটি উভয় পাশ দখল করে রেখেছে ভাসমান দোকান পাট ও কাঁচাবাজার। ব্যস্ততম হাইওয়ে মহাসড়কের দু’পাশের অংশ এখন তাঁদের দখলে। এতে সড়কের ওই স্থানে যানবাহন চলাচলে ব্যাপক বাধার সৃষ্টি করেছে। যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, মহাসড়কের উপর এভাবে বাজার বসানো পুরোপুরো অবৈধ। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে মানুষের চলাচল নিশ্চিত করতে এ বাজারটি বন্ধ করা জরুরী। কিন্তু কেন বাজারটি সরানো হচ্ছে না এর কারণ অনুসন্ধানে কিছু তথ্য মিলে। এই বাজার ঘিরে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। চাঁদার ভাগ বসাচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু লোকজন ও সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য।

জানা যায়, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বাজারটি বসলেও উপজেলা পরিষদ কতৃক এর কোন ইজারা নেই। তবুও বছরে পর বছর সড়ক দখল করে চলছে ব্যবসা। বাজারের ভাসমান দোকান থেকে আদায় হচ্ছে চাঁদা। একদিকে বাজার অন্যদিকে সিএনজি স্টেশন। এসব কিছুই নাকি সম্ভব হয়েছে মোটা অংকের লেনদেনে। ম্যানেজ করা হয়েছে উপজেলার হর্তাকর্তাদের। এ জন্য অনেকের মুখ বন্ধ। নেই অভিযান। তথ্য মিলে বাজারে বসা ভাসমান দোকান থেকে চাঁদা তুলে মুঠোবন্দি করেন মোঃ নুরু সওদাগর নামে এক ব্যক্তি। এর সাথে যোগসুত্র রয়েছে উপজেলা অফিসের সহকারি অমর বাবু’র। যদিও তিনি মুঠোফোনে অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু জনশ্রুতি রয়েছে এসব অনিয়মের কারণেই পুর্বের কর্মস্থল পটিয়া ছাড়তে হয় তাঁকে।

বাজারটি সপ্তাহের দুইদিন (সোম-শুক্রবার)। এতে ১২০ থেকে ১৪০টি দোকান বসে। প্রতি দোকান থেকে ৮০ টাকা কিংবা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আদায় করা হয়। উপজেলার আন্ডারে এ টাকা তোলা হয়। শুক্রবার বেশি টাকা আদায় হয়। টাকা তোলেন নুরু সওদাগর নিজেই। সব মিলিয়ে বাজারদিন ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা ওঠে। সে হিসেবে মাসে নিম্নে ৭২ হাজার টাকা। বছরে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আদায় হলেও রাজস্বখাতে তা জমা নেই। তাহলে এই টাকা যাচ্ছে কার পকেটে? প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।

সূূত্র জানায়, এ বছরের বৈশাখ থেকে মোঃ নুরু তিনটি হাট বাজার পেয়েছেন। আদায় করা সব টাকা তাঁর কাছে জমা রয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আসলে টাকাগুলো পৌঁছানো হবে। এসব তথ্য জানিয়েছেন মোঃ নুরু সওদাগর নিজেই। যা প্রতিবেদকের কাছে অডিও রেকর্ড জমা রয়েছে। নুরু সওদাগর বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান বিদেশ থেকে আসলে একটা সিদ্ধান্ত হবে। আপাতত উপজেলা থেকে আমাকে টাকা আদায় করতে বলা হয়েছে। তাঁদের কথামতো আমি টাকা আদায় করছি।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাসড়কের বিষফোঁড়া হলো অবৈধ হাটবাজার, বাস-ট্রাক ও সিএনজি স্ট্যান্ড। তাহলে, কার পকেট ভারি করে প্রকাশ্যে চলছে বিপদজ্জনক বাজারটি।

শিকলবাহাস্থ পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, ’বাজারটি আমার থানার সামনে হলেও এটা আমার জুরিডেকশন এরিয়া নয়। ভেল্লাপাড়া ব্রিজের পর থেকে আমাদের এলাকা। শান্তিরহাট রাস্তার উপরও এ ধরনের বাজার ছিল আমার তা উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু শিকলবাহা ক্রসিং বাজারটি দেখবে মেট্টো পুলিশ।’ বিষয়টি জানতে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ দুলাল মাহমুদের নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না হওয়ায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা জানান, ‘আমরা এখনো পযর্ন্ত বাজারটি ইজারা দেওয়ার চিন্তা করিনি। কেননা সড়ক ও জনপথ বিভাগের জন্য জায়গাটি ওঠে যাচ্ছে। এখানে এ ধরনের চাঁদা নেওয়ার কোন অপশন নেই। অমর বাবু কেন টাকা নেবেন। বরং ভালো ভাবে আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। কে টাকা নেয় এবং উঠায়। কাকে টাকা দেয় আমাকে জানাতে পারেন।’

চট্টগ্রাম দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘এভাবে সড়ক ও জনপথের সড়কের উপর বাজার বসানোর ফলে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়। মহাসড়ক আইনে এসব বাজার সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব বাজারের কারণে নিরাপদ মহাসড়ক গড়ার উদ্যোগ সফল হচ্ছে না।’

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments