33.5 C
Rajbari
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Homeজাতীয়পদ বানিজ্যসহ নানা অভিযোগ যুব মহিলা লীগ নেত্রী লিমার বিরুদ্ধে

পদ বানিজ্যসহ নানা অভিযোগ যুব মহিলা লীগ নেত্রী লিমার বিরুদ্ধে

সাভার প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের প্যাডে গত ৩০ জুলাই ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগ শাখা কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে কমিটির সভাপতি শেখ লিমা’র বিরুদ্ধে পদ্য বাণিজ্য, কমিটিতে ভুয়া নাম, একাধিক নামে নিজের নাম্বার সহ এক নাম্বার বার বার ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত সরকারি অনুদানের ঘর ও নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।

ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৮০% সদস্য ভূয়া বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মিম খাঁন নামের এক ভূক্তভোগী কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বরাবর সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে সমাধানের জন্য একটি আবেদন পত্র পাঠানো হলেও তা গ্রহণ করেননি কেন্দ্রীয় কমিটি।

কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবর করা সেই আবেদন পত্র সূত্রে জানায় যায়, মিম খান যুব মহিলা লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। তিনি গত ২০২১ সাল থেকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কনক চাঁপার সহিত সমস্থ সাংগঠনিক প্রোগ্রামে লোকজন নিয়ে উপস্থিত থাকেন।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া-আসার সুবাদে ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি শেখ লিমার সাথে তার ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। সেই সুবাদে মিম খান গত ফ্রেব্রুয়ারীতে সভাপতি লিমাকে ধার বাবদ ৬০ হাজার টাকা দেন।

ধারের টাকা চাইলে লিমা জানান কমিটিতে তার নাম নিয়ে অনেক ঝামেলা হচ্ছে, সাধারণ সম্পাদক কনক চাঁপা তার নাম রাখতে চাচ্ছেন না। তবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ দেখায়নি লিমা।

এরপরে লিমা আবারও মিম খানের কাছে কিছু টাকা দাবি করেন এবং মিম খান তাকে আরও ২০ হাজার টাকা দেন। পরবর্তীতে লিমা একটি কমিটির খোসড়া কাগজ দেন মিমকে। যে কমিটির মিম খানের নাম ২নং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রয়েছে।

সেই কাগজ দিয়ে মিম খানকে জানায় অনেক ঝামেলায় তার নাম বসিয়েছেন লিমা। পরে মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে মিম খানের নিকট আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করেন লিমা। পরে মিম খান আরও ১০ হাজার টাকা দেন ঢাকা জেলা উত্তর যুবলীগের সভাপতি তাসলিমা শেখ লিমা। সর্বমোট মিম ৯০ হাজার টাকা দেন তাকে।

কিছুদিন পরে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যখন ঢাকা জেলা উত্তর কমিটির অনুমোদ দেন তখন মিম খান দেখেন সেখানে তার নাম নাই। তার নামের স্থানে অন্য একজনের নাম লেখা আছে।

সে সময় কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাজমা আকতার দেশের বাহিরে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় তিনি সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলির কাছে নাম থাকার বিষয়ে কারণ জানতে চান। কিন্তু তিনি মিমকে কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন মিম খান।

এদিকে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের খোসড়া কমিটির একটি কপি আসে ‘দৈনিক খোলা চোখ’ এর হাতে, যা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কমিটির বিভিন্ন স্থানে নামের পাশে কোনো ফোন নাম্বার ব্যবহার করা হয়নি এবং এমন নামের কোনো যুব মহিলা লীগ নেত্রী আছে বলে কেউ চিনেন না। তাই এগুলো ভূয়া নাম ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। এছাড়াও একাধিকস্থানে নিজের নাম্বার সহ এক নাম্বার বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। একই কমিটিতে রয়েছে মা-মেয়ের নামও।

এ বিষয়ে মিম খান বলেন, আমি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিকে এ বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু তিনি বাহিরে থাকায় তা সম্ভব হয়নি। পরে আমি একটি লিখিত অভিযোগ দিলে কেন্দ্রীয় কমিটি তা গ্রহণ করেনি। তবে মৌখিকভাবে বলেছেন বিষয়টি দেখবেন।

পদ না পেয়ে যুব মহিলা লীগ থেকে অব্যাহতি নেয়া শাহনাজ পারভীন শোভা বলেন, আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় ৬০ হাজার টাকা খরচ করিয়েছে। কিন্তু আমাকে পদ দেয়নি। পরে আমি যুব মহিলা লীগ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু পক্ষাঘাত ও পেশাজীবি পরিষদ (বিপিপিপি) নামের একটি সমাজবেসামূলক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরকারি অনুদান দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ৪ কোটি ৭২ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাতকারী চক্রের অন্যতম সদস্য যুব মহিলা লীগের ঢাকা জেলা (উত্তর)-এর সভাপতি শেখ লিমা।

পরে ওই প্রতিষ্ঠানের সাভার শাখার বর্তমান সভাপতি শামীমা বাসার বাদী হয়ে গত বছর ডিসেম্বরে আটজনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

আসামিরা হলেন- আশুলিয়ার শিমুলিয়া গ্রামের আব্দুল শেখের মেয়ে লিমা শেখ (৩০), জন পালমা এর ছেলে দীলিপ পালমা (৫০), দীলিপ পালমার স্ত্রী প্রণতি পালমা (৪০), আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার স্বপনের স্ত্রী ঝুমা আক্তার (৩৫), হেমায়েতপুরের আনোয়ারের স্ত্রী আলেয়া আক্তার আলো (৪০), আশুলিয়া বাসাইদের রফিকুলের স্ত্রী সালমা মেম্বার (৪০), আশুলিয়ার পলাশবাড়ীর সুমনের স্ত্রী সুমী আক্তার (৩০) ও সাভারের আড়াপাড়ার নুরুন্নবীর স্ত্রী শামীমা আফরোজ মুন্নী (৩৫)। এদের মধ্যে লিমা বর্তমানে ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি, ওই সময় তাঁরা প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন।

আসামীদের মধ্যে ঘর ও নলকূপ বরাদ্দ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে দীলিপ পালমা ও তার স্ত্রী প্রণতি পালমা এক কোটি টাকা, ঝুমা খান এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা, শামীমা আফরোজ ১৫ লাখ টাকা, সালমা মেম্বার দেড় কোটি টাকা, আলেয়া আক্তার আলো ৪০ লাখ টাকা, সুমী আক্তার ১০ লাখ টাকা, লিমা শেখ সাত লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে বলে প্রমান পায় মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু পক্ষাঘাত ও পেশাজীবি পরিষদ একটি সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময় দুঃস্থ, দরিদ্র, পক্ষাঘাতগ্রস্থদের সাহায্য সহযোগিতা করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির নামে দুঃস্থ দরিদ্র এবং পক্ষাঘাত গ্রস্থদের প্রদানের জন্য জায়গাসহ ২০টি ঘর ও ২৮টি নলকূপ বরাদ্দ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। জায়গাসহ প্রতিটি ঘরের মূল্য ৩০ হাজার টাকা এবং প্রতিটি নলকূপ ১০ হাজার টাকা করে ধার্য্য করা হয়।

সেই বরাদ্দের টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে শতশত হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন তারা। পরে এমন ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের সাভার শাখার বর্তমান সভাপতি শামীমা বাসার বাদী হয়ে গত বছর ডিসেম্বরে আটজনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে।

তদন্ত শেষে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় তদন্ত কর্মকর্তা। পরে পিবিআই কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রকাশ্য ও গোপন তদন্ত করে এবং কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী শামীমা বাসার বলেন, আমার দায়ের করা মামলায় তারা জামিনে আছে।

বিভিন্ন অভিযোগর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলালীগ সভাপতি তাসলিমা শেখ লিমা মুঠোফোনে জানান, ‘বঙ্গবন্ধু পেশাজীবি এবং পক্ষাগাত পরিষদের নামে আমি কোনো আর্থিক দূর্নীতি করিনি। মিম খান নামের এক নেত্রীর কাছ থেকে পদ দেওয়ার কথা বলে নব্বই হাজার টাকা নিয়েও পদ দেননি।’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওরে আমি জুতা মারবো, ও একটা ফালতু।’ এই বলে তিনি মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।তারপর বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নাই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments