26.9 C
Rajbari
শনিবার, মে ১১, ২০২৪
Homeমতামতদুধ দোহনঃ এক নিষ্ঠুর মানবীয় জীবিকা

দুধ দোহনঃ এক নিষ্ঠুর মানবীয় জীবিকা

ড. তোফায়েল আহমেদ: আমি ছোটবেলায় দেখেছি দুগ্ধপোষ্য একটি বাছুরকে পারিবারিক দুগ্ধ খামারি রাতে গাভীর কাছ থেকে তফাতে বেঁধে রাখে, যাতে মায়ের দুধে মুখ দিতে না পারে। সারারাত বাছুরকে বঞ্চিত রেখে যে দুধ গাভীর ওলানে জমা হয়, সকালে সে দুধ গামলা ভরে দোহন করে নেয়া হয়। দোহন পদ্ধতিটি আরো নিষ্ঠুর।প্রথমে সারা রাত বেঁধে রাখা গো-শিশুটিকে সকালে বাধনমুক্ত করা হয়। সে অভুক্ত-তৃষিত গো-শিশু দৌড়ে মায়ের ওলানে হামলে পড়ে দুধ খেতে থাকে। গোয়ালা বা দোহনকারি বাচ্চাকে দুধ শান্তিমত খেতে দেয় না।একটান দু’টান দেয়ার পর বাট থেকে বাচ্চার মুখ সরিয়ে দেয়। এ এক নিষ্ঠুর খেলা। এ খেলাকে বলে ’পানান’। একবার খেতে দেয়, আবার সরিয়ে নেয়। এভাবে কিছুক্ষণ গাভীর বাচ্চার সাথে ’দুধ খাওয়ানো’ ও দুধ থেকে ছাড়ানোর লুকোচুরি খেলার পর যখন দেখা যায় গাভী ওলানে আর দুধ ধরে রাখতে পারে না।দুধ ছেড়ে দিতে চায়। তখন বাছুরটিকে একজন জোর করে ধরে থাকে, আর গোয়ালা মনের সুখে গাভীর দুধ দোহন করে যায়।দুই হাঁটুর মাঝখানে পাত্রটি রেখে দু’হাতের চার আঙ্গুল- বুড়ো আঙ্গুল ও তর্জনি এক সাথ করে ওলানের শেষ দুগ্ধ ফোটা অবশিস্ট থাকা পর্যন্ত দোহন করা হয়।এভাবে গোয়ালার গামলা ভর্তি আর গাভীর ওলান দুগ্ধশূণ্য হয়।এরপর বাচ্চা ছাড়ান পায়।ছাড়ান পেয়ে শূণ্য ওলান চাটতে থাকে। হয়ত কয়েক ফোটা পায়। কিন্তু তাতে নিরীহ গো-শিশুটির ক্ষুধা-তৃষা কোনটাই মিটে না। শূণ্য ওলানে চাটতে দিতে গাভীর কস্ট হয়।গাভী এক সময় বাচ্চাকে সরিয়ে দেয়, ওলানে মুখ দিতে দেয় না। যতদিন গো-বৎসটি ঘাস না খেতে পারে ততদিন পর্যন্ত ’আধা ভূখা আধা তৃষিত’ জীবন যাপন করেই বেঁচে থাকে।
এ নিষ্ঠুর প্রথায় যে দুধ দোহন করা হয় তা মানব শিশু মনের সুখে পান করে।নানা দুধ নিভৃর নানা মিস্টি বা দুগ্ধজাত খাবার তৈরী হয়। এ দুধ পান করে সে শিশু এবং বিনা অনুশোচনায় এ দুগ্ধজাত খাবার যারা আমরা গ্রহন করি কীভাবে আমরা মানবিক হই?
আধুনিককালে দুগ্ধ খামারে এত নিষ্ঠুরভাবে ’পানান’ দিয়ে দোহন করা হয় না। মেশিনে দুধ দোহন বা সংগ্রহ করা হয় । তবে একটি সময়কাল বাচ্চাকে গাভী থেকে পৃথক রেখে দুধ ওলানে জমা করা হয়। তারপর মেশিন লাগিয়ে দুধ সংগ্রহ করা হয়। ‘মানবিক’ খামারি গো –শিশুর জন্য কিছু অবশিস্ট রেখেই হয়ত মেশিন বন্ধ করে। কারণ এ বাচ্চা বড় করেও তার মুনাফা আসে।
যে শিশু তখন দুধ ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারে না তাকে বঞ্চিত করে তার মার দুধ এভাবে ডাকাতি হয়। এর নাম গাভী পালন বা দুগ্ধ খামার । আচ্ছা মানবতাবাদী গান্ধীজী ছাগদুগ্ধ পান করতেন। ঐ ছাগীর বাচ্চার জন্য দুধের কত অংশ অবশিস্ট থাকত ?
আজকাল অনেকে গরু-মহিষ-উট-ছাগি-ভেড়ার বিকল্প ’সয়া দুধ’, ’ওট দুধ’ নানা প্রাকৃতিক উৎসের দুধ পান করেন।প্রসেস করা পাওডার দুধও বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয়। আবার প্রসেস করা পাস্তুরিত গরুর দুধও বিশ্বব্যাপি বাজাজাত হয়।কিন্তু বাছুর এবং মায়ের বঞ্চনার চিত্র গো-দুগ্ধের ক্ষেত্রে মূলত একই থাকে।এ বিষয়টিতে সব সময় মানুষের প্রয়োজনের দিকটি যত গুরুত্ব পেয়েছে, পশুর প্রতি মানবতা মোটেও ধারণার মধ্যে ছিল না বা নেই।
(লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া)
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments